বিজয়নগর সাম্রাজ্য [Vijayanagara Empire]

হরিহর ও বুক্কা বিজয়নগর সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। হরিহর ও বুক্কা প্রথমে ওয়ারাঙ্গলের কাকতীয় বংশের রাজা দ্বিতীয় প্রতাপ রুদ্রদেবের রাজস্ব আধিকারিক ছিলেন। মুসলমানরা কাকতীয় বংশ উচ্ছেদ করেন। তারপর তারা অর্থাৎ হরিহর ও বুক্কা কাম্পেলিতে কর্মচারী হিসাবে নিযুক্ত হন। কিন্তু মুসলমানরা তাদের ধরে নিয়ে যায় দিল্লীতে এবং ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দেয়। তুঘলকরা হরিহর, বুক্কা, কাম্মান, সুদাপ্পা ও মারাগ্লা এই পাঁচভাইকে কারাগার থেকে মুক্তি দিলে মাধববিদ্যারণ্য বা মাধবাচার্য তাদের পুনরায় হিন্দুধর্মে দীক্ষা দেন এবং ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পত্তন করেন। বিজয়নগরে ৪টি রাজবংশ রাজত্ব করেন। যথা—সঙ্গম, সালুভ, তুলভ ও আরবিডু।

  • বিজয়নগর সাম্রাজ্যের আবির্ভাব ঘটে ১৩৩৬ খ্রিঃ।
  • রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রভাবে তুঘলক সাম্রাজ্যের থেকে দক্ষিণাত্যের বিজয়নগর আলাদা হয়ে যায়।
  • ১৪৮৫ খ্রিঃ পর্যন্ত সঙ্গম বংশের রাজারা রাজত্ব করে এবং ১৪৮৫ থেকে ১৫০৫ খ্রিঃ সালুভ বংশ এবং ১৫০৫ থেকে ১৫৭০ খ্রিঃ তুলুভ বংশের রাজারা রাজত্ব করে।

সঙ্গম বংশ

হরিহর (প্রথম) (১৩৩৬ –৫৬ খ্রিঃ) :

  • হরিহর (প্রথম) ছিলন বিজয়নগরের প্রথম শাসক।
  • তিনি হােয়সল রাজা চতুর্থ বল্লালকে 1346 খ্রিস্টাব্দে পরাজিত করে বিজয় নগর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।
  • ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে হরিহর কদম্ব রাজ্যটি তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।
  • হরিহর, মাদুরাই দখল করে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ১৩৫২-৫৩-এ দুটি বাহিনীও প্রেরণ করেছিলেন, একটি রাজপুত্র সাভন্নার অধীনে এবং অপরটি কুমার কাম্পানার অধীনে ।
  • এই অভিজানের কথা তাঁর স্ত্রী গঙ্গা দেবী রচিত "মধুরা বিজয়ামে" ব্যাপকভাবে আলোচনা করেছেন।
  • তিনি নতুন রাজধানী বিজয় (বিদ্যানগর) স্থাপন করেন। বিজয়নগরের পূর্বনাম ছিল বিরূপাক্ষ পট্টন।
  • তিনি বাদামী দুর্গটি শক্তিশালী করে গড়ে তােলেন এবং তার ভাই কাম্পানকে উদয়গিরি দুর্গের শাসক নিযুক্ত করেন।
  • অনন্তরাস চিক্কাউদয় ছিলেন তার প্রধান মন্ত্রী।

প্রথম বুক্কা (১৩৫৬–৭৭)

  • তিনি 'বেদমার্গ প্রতিষ্ঠাপক' উপাধি নেন।
  • বুক্ক রায়ের সময় বাহমনি সুলতান মুহম্মদ শাহের সঙ্গে বিজয়নগরের সংঘর্ষের সূত্রপাত।
  • ১৩৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি চিন সম্রাটের কাছে দূত পাঠান।
  • ১৩৭৭ খ্রিস্টাব্দে বুক্কা মাদুরার সুলতান শাহীকে পরাস্ত করে তামিল, কেরল অধিকার করেন।
  • তিনি রাজনারায়ণ শম্ভুরায় সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযান করেন।
  • মাদুরা বিজয় কাব্য রচনা করেন কাস্পনের স্ত্রী গঙ্গাদেবী।
  • সায়নাচার্য ছিলেন তার মন্ত্রী।
  • তেলেগু কবি নানাসােম তার রাজসভায় ছিলেন।

দ্বিতীয় হরিহর (১৩৭৭ – ১৪০৪):

  • সিংহাসন দখল করার পর তিনি 'মহারাজাধিরাজ' এবং ‘রাজপরমেশ্বর’ উপাধি নেন।
  • তিনি কাঞ্চি, ত্রিচিনপল্লী, কানাড়া, চিঙ্গলপুটি ইত্যাদি এলাকা জয় করে নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
  • তিনি ধাবল, ঘুরপতন জয় করেন।
  • তিনি বেলগা ও গােয়া বাহমনি সুলতান ফিরোজ শাহের কাছ থেকে দখল করেন।
  • শ্রীলঙ্কার রাজাকে বিজয়নগরে কর পাঠাতে বাধ্য করেন।

দ্বিতীয় হরিহরের পর বিজয়নগরের সিংহাসনে বসেন যথাক্রমে বিরূপাক্ষ (প্রথম), দ্বিতীয় বুক্ক। এই শাসকের শাসনকাল ছিল খুবই কম দিন। উল্লেখযােগ্য কোনাে ঘটনার কথা জানা যায়নি।

প্রথম দেবরায় (১৪০৬ –২২ খ্রিঃ)

  • দ্বিতীয় বুক্কার পর বিজয়নগরের সিংহাসনে বসেন প্রথম দেবরায়।
  • ফেরিস্তার মতে ফিরােজ শাহ বাহমনি তাকে পরাস্ত করেন। তিনি ফিরােজশাহকে দশলক্ষ মুদ্রা, বহুমণিমুক্তো ও হাতি দেন। তিনি নিজ কন্যার সঙ্গে ফিরােজ শাহের বিবাহ দেন।
  • ১৪১৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিনি বাহমনি সুলতানকে পরাজিত করে এই অপমানের প্রতিশােধ নেন।
  • তিনি অশ্বারােহী বাহিনীর উপর জোর দিয়েছিলেন।
  • তিনি জলসেচের জন্য তুঙ্গভদ্রা ও হরিদ্রা নদীতে বাঁধ নির্মাণ করেন।
  • বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হরিবিলাসন’ এর লেখক শ্রীনাথ প্রথম দেবরায়ের পৃষ্ঠপােষকতা লাভ করেন।
  • তারপরে সিংহাসনে বসেন বিদ্যারণ কালজন, রামচন্দ্র ও প্রথমবিজয়।
  • ইতালীয় পর্যটক নিকোলাে কন্টি তার রাজসভায় আসেন।

দ্বিতীয় দেবরায় (১৪২৩ –৪৬ খ্রিঃ):

  • দ্বিতীয় দেবরায় ছিলেন সঙ্গম বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট।
  • তিনি উড়িষ্যার গজপতি রাজ্যকে পরাস্ত করে গজবেতকর উপাধি নিয়েছিলেন।
  • তিনি অন্ধের কন্তাভিদু রাজ্য ও কেরল রাজ্য জয় করেন।
  • কালিকটের ‘জামরিন’ তার অধীনে ছিল।
  • তার দেওয়ান লাক্কানদানিক শিলভ জয় করেন।
  • তিনি সংস্কৃতে ‘মহানাটক সুধা নিধি’ নাটকটি লেখেন।
  • দ্বিতীয় দেবরায় মুসলমানদের তার সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের জায়গীর দেন এবং মসজিদ গড়ে তোলার স্বাধীনতা দেন।
  • ইতালীয় পর্যটক নিকোলাে কন্টি ও পারসিক রাষ্ট্রদূত আব্দুর রেজ্জাক দ্বিতীয় দেবরায়ের শাসনকালে বিজয়নগর রাজ্যে আসেন।

মল্লিকার্জুন (১৪৪৬ – ৫৫ খ্রিঃ) :

  • তার শাসনকালে উড়িষ্যার রাজা বিজয়নগর রাজ্যের উদয়গিরি ও কোণ্ডবিভু আক্রমণ করে দখল করেন।
  • তিনি বাহমনি রাজ্যের মুসলমান শাসকের আক্রমণপ্রতিহত করেন।

বিরূপাক্ষ (দ্বিতীয়) (১৪৬৫ – ৮৫ খ্রিঃ) :

  • বিরূপাক্ষ (2য়) মল্লিকার্জুনের ভাই ছিলেন।
  • পাণ্ড্য রাজা বিজয়নগরের কাঞ্চী দখল করেন।
  • বাহমনি শাসক বিরূপাক্ষের কাছ থেকে গােয়া ছিনিয়ে নেন।
  • অবশেষে চন্দ্রগিরির সামন্ত রাজ নরসিংহ সালুভ ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে দুর্বল বিরূপাক্ষকে হত্যা করে সংগম বংশের পতন ঘটান। নরসিংহ সালুভ রাজবংশের শাসনকালের সূচনা করেন।

সালুভ বংশ (১৪৮৫ – ১৫০৫ খ্রিঃ)

নরসিংহ সালুভ (১৪৮৫ – ১৪৯০ খ্রিঃ):

  • ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দ বিজয়নগরের সিংহাসনে বসেন।
  • নরসিংহ সালুভ ছিলেন সালুভ গুন্দার পুত্র।
  • সংগমবংশীয় রাজা মল্লিকার্জুনের কনিষ্ঠ পুত্র রাজশেখরকে নরসিংহ সালুভ রাজপ্রাসাদে আশ্রয় দেন।
  • অন্ধ রাজ্য জয় করে শাসন করেন।
  • নরসিংহ সালুভের মৃত্যুর পর তার শিশুপুত্র ইম্মদি নরসিংহকে বিজয়নগরের সিংহাসনে বসিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরশ নায়ক কার্যত সকল ক্ষমতা দখল করেন।

ইম্মদি নরসিংহ( ১৪৯০ – ১৫০৫ খ্রিঃ)

  • নরশ নিজেকে 'রক্ষাকর্তা' ও ‘স্বামী’ বলতেন।
  • ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ নরশ নায়কের মৃত্যু হয়।
  • এর পর মাত্র দুই বছর শাসন করেন ইম্মদি নরসিংহ।
  • সালুভ রাজবংশের সেনাপতির ছেলে বীরসিংহ সালুভ রাজবংশের উচ্ছেদ ঘটিয়ে তুলুভ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

তুলুভ বংশ (১৫০৫ –৭০ খ্রিঃ)

বীর নরসিংহ ( ১৫০৫ – ০৯ খ্রিঃ):

  • তিনি সালুভ বংশের শেষ শাসক ইম্মদি নরসিংহকে পরাজিত করে বিজয়নগরের সিংহাসনে বসেন।
  • তিনি অত্যন্ত দয়ালু শাসক ছিলেন এবং তীর্থক্ষেত্রে গিয়ে প্রচুর ধন দৌলত বিতরণ করতেন।
  • পাের্তুগিজ সেনাপতি আলমিদার সঙ্গে চুক্তি করে বিজয়নগরে আরবি ঘােড়া আনার ব্যবস্থা করেন।
  • তিনি ইউসুফ আদিল শাহের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
  • তিনি বিবাহকর রােহিত করেন।

কৃষ্ণুদেব রায় ( ১৫০৯ –৩০ খ্রিঃ) :

  • বীরসিংহের ভাই কৃষ্ণদেব রায় ছিলেন বিজয়নগরের শ্রেষ্ঠ শাসক এবং ভারতের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা।
  • তিনি বিজাপুরের সুলতান ইউসুফ আদিল শাহকে পরাস্ত ও হত্যা করে গুলবর্গা দখল করেন।
  • তিনি উড়িষ্যার গজপতি সম্রাট প্রতাপরুদ্রকে পরাস্ত করে উদয়গিরি ও কোন্ডবিড় দখল করেন।
  • ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি রায়চুর দোয়াব অধিকার করেন।
  • তিনি গােলকুন্ডার কুলিকুতব শাহকে পরাস্ত করেন।
  • তিনি 'যবন রাজ্য স্থাপনাচার্য' উপাধি ধারণ করেন।
  • তিনি অভিনব ভােজ নামে পরিচিত ছিলেন।
  • নিজে বৈষ্ণব ধর্মের উপাসক হলেও তিনি পরধর্ম সহিষ্য ছিলেন। কৃষ্ণদেব রায় কৃষ্ণস্বামী, হাজারস্বামী এবং বিঠলস্বামী মন্দির নির্মাণ করেন।
  • তিনি নেগােলপুরা নামে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন তার মা নাগম্বার স্মৃতিতে।
  • ব্যাসরাজ ছিলেন তাঁর রাজগুরু ও শিক্ষক।
  • বিজয়নগরের শ্রেষ্ঠ নরপতি কৃয়দেব রায়ের রাজসভায় ‘অষ্টদিগগজ’ নামে আটজন খ্যাতনামা কবি অলংকৃত করেছিলেন। এদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন অল্লসনি পােদ্দানা, যাকে অন্ধ্র কবিতার পিতামহ বলা হয়।
  • পােদ্দানা ছিলেন তাঁর প্রধান সভাকবি। পােদ্দানা রচনা করেন ‘মনুচরিতম’ ও ‘হরিকথা সারাংশম’ গ্রন্থ দুটি।
  • রাজা কৃয়দেব রায় তেলুগু ভাষায় ‘আমুক্ত মাল্যদা’ নামে বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়া কৃয়দেব রায় সংস্কৃতে ‘জাম্ববর্তী কল্যাণম’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন।
  • গােয়ার পর্তুগীজ গভর্নর আলবুকার্ক-এর সঙ্গে তার সন্ধি হয়। আলবুকার্ক ভাটকল দুর্গ নির্মাণের অনুমতি নেন কৃষ্ণদেব রায়ের কাছ থেকে।
  • পাের্তুগিজ পর্যটক পায়েজ কৃষ্ণুদেব রায় সম্পর্কে প্রচুর প্রশংসা করা হয়েছে।
  • পাের্তুগালের বারবােসা কৃয়দেব রায়ের সময়ে বিজয়নগরে আসেন।

অচ্যুত রায় (১৫৩০ –৪০ খ্রিঃ)

  • কৃয়দেব রায়ের পর বিজয়নগরের রাজা হন অচ্যুত রায়।
  • অচ্যুতের আমলে বিজয়নগর রাজ্যের ক্ষয় শুরু হয়।
  • রায়চুর দোয়াব তার আমলে হাতছাড়া হয়। ইসমাইল আদিল শাহ রায়চুর দোয়াব দখল করে নেন।
  • তিনি গুজরাটের সুলতান ও গােলকুন্ডার সুলতানকে পরাস্ত করেন।
  • ফার্নান্দো নুনিজ অচ্যুত দেবরায়ের সময় বিজয়নগর সাম্রাজ্যে আসেন।
  • এর পর সিংহাসনে বসেন তাঁর পুত্র প্রথম ভেঙ্কট ( ১৫৪২ খ্রিঃ)।

সদাশিব রায় ( ১৫৪৩ –৭০ খ্রিঃ):

  • তুলুভ বংশের সদাশিব রায় ছিলেন খুবই দুর্বল শাসক।
  • তার দুর্বলতার সুযােগে মন্ত্রী রাম রায় সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন।
  • মন্ত্রী রামরায় দক্ষিণের রাজ্য আক্রমণ করে তাদের উপর বশ্যতামূলক সন্ধি চাপানাের চেষ্টা করেন।
  • রামরায়ের আগ্রাসনে অতিষ্ঠ হয়ে আহম্মদনগর, বিজাপুর, গােলকুন্ডা ও বিদরের সুলতানরা জোট বেঁধে বিজয়নগর আক্রমণ করেন।
  • ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে জানুয়ারী তালিকোটার যুদ্ধে বিজয়নগর বাহিনী ধ্বংস হয়। তালিকোটার অপর নাম ছিল রাক্ষস তঙ্গোড়ি বা বানিহাট্টির যুদ্ধ। এই যুদ্ধে হুসেন নিজাম শাহ রামরায়কে নিহত করেন এবং মুসলমানরা বিজয়নগরের রাজধানী লুণ্ঠন করেন।

আরবিড়ু বংশ ( ১৫৭০ – ১৬৪৫ খ্রিঃ )

তিরমুল (১৫৭০ – ৭২ খ্রিঃ) :

  • রাম রায়ের ভাই তিরুমল তুলুভ বংশের শেষ রাজা সদাশিব রায়কে সিংহাসনচ্যুত করে সিংহাসন দখল করেন।
  • তিরুমল পেনুগােন্ডা নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করে বিজয়নগরকে নতুন করে তােলার চেষ্টা করেন।
  • তাঁর প্রতিষ্ঠিত বংশ আরবিড়ু বংশ নামে পরিচিত।
  • এর পর সিংহাসনে বসেন প্রথম শ্রীরঙ্গ (১৫৭২ – ৮৫ খ্রিঃ)।

দ্বিতীয় ভেঙ্কট (১৫৮৫ – ১৬১৪ খ্রিঃ) :

  • প্রথম শ্রীরঙ্গের পর বিজয়নগরের রাজা হন দ্বিতীয় ভেঙ্কট।
  • তিনি তার রাজধানী পেনুগােণ্ডা থেকে চন্দ্রগিরি ও পরে ভেলােরে নিয়ে যান।
  • তিনি তামায়া ও লিঙ্গম বিদ্রোহ দমন করেন।
  • তার সময় পর্তুগীজরা গােলকুন্ডার অনুমতি নিয়ে নাগাপট্টনম ও মছলিপট্টনমে কারখানা গড়ে তােলেন।
  • জিঞ্জি নায়ক পর্তুগীজ ও ইংরেজদের সেন্ট ফোর্ড ডেভিড ও দেব পত্তনমে ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে কারখানা করার অনুমতি দেন।
  • দ্বিতীয় ভেঙ্কট পুলিকটে কারখানা খােলার এবং খ্রিস্টান মিশনারীদের গির্জা গঠনের অনুমতি দেন।
  • এর পর সিংহাসনে বসেন যথাক্রমে রামদেব রায়, তৃতীয় ভেঙ্কট এবং তৃতীয় শ্রীরঙ্গ।
  • তৃতীয় শ্রীরঙ্গ ছিলেন আরবিডু রাজবংশের শেষ রাজা।
  • মােঘলদের শাসনকালে ১৬৪৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মীর জুমলা ও মুস্তাফা খান বিজয়নগর রাজ্যের ধ্বংস করেন।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থা

  • বিজয়নগর সাম্রাজ্য ছিল হিন্দু সামন্ত প্রথা।
  • সামন্ত ভূস্বামীদের বলা হত ‘অমরনায়ক’।
  • রাজাকে বলা হত 'কার্যকর্তা'।
  • সচিবকে বলা হত “ দিওয়ান খান।
  • মুখ্য সচিব বা প্রধান সচিব হল সর্বনায়ক।
  • হিসাবরক্ষক হল করণিকম।

বিজয়নগরের প্রাদেশিক শাসন

  • প্রদেশকে বলা হত রাজ্য, মন্ডল, রায়চুর ইত্যাদি।
  • প্রদেশের শাসনকর্তাদের বলা হত নায়ক না নায়েক।
  • কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নায়েক হল মাদুরাই (তিরুমলনায়ক), থাঞ্জাভুর, জিঞ্জি, ইক্কেরি (ভেঙ্কটপ্লানায়েক) এবং মহীশূর।
  • প্রাদেশিক শাসনকর্তারা নিজ নিজ অঞ্চলে ছিল মুকুটহীন রাজা।
  • তারা কতদিন নিজ পদে থাকতে পারবেন তার কোন বাঁধাধরা নিয়ম ছিল না।
  • তাদের নিজস্ব দরবার ও সেনাদল ছিল।

বিজনগরের সামরিক প্রশাসন

  • সামরিক দপ্তরকে বলা হত কান্দাচার।
  • সামরিক দপ্তরের প্রধানকে বলা হত দন্ডনায়েক।
  • সামরিক প্রধানরা যারা কর আদায় করত তাদের বলা হত ‘পলিয়গর’ বা ‘পলিগার।
  • হিন্দু ও মুসলিম সকল শ্রেণীর মানুষদের সামরিক বাহিনীতে নিয়ােগ হত।
  • সামরিক বাহিনীতে রথ বাহিনী ছিল না।
  • বিজয়নগরে চার প্রকারের দুর্গ ছিল যথা স্থলদুর্গ, গিরিদুর্গ, বনদুর্গ, জলদুর্গ।

বিজয়নগরের স্থানীয় প্রশাসন

  • প্রদেশগুলিকে জেলা বা কোট্টাম বা কুরমে ভাগ করা হত।
  • জেলাগুলিকে নাড়ুতে ভাগ করা হত।
  • নাড়ুগুলি আম্বাদীন মেলগ্রাম (৫০টি গ্রাম) এবং গ্রাম নিয়ে গঠিত হত।
  • ব্রাহ্মণদের গ্রামকে বলা হত চতুর্বেদী মঙ্গলম।
  • প্রতিটি গ্রামে ১২টি করে কার্যকরী দল ছিল। এদের বলা হত ‘আয়াগার ব্যবস্থা।
  • গ্রাম প্রধানের উপাধি ছিল ‘সুব্রহ্মণ্যম আইয়ার।

বিজয়নগরের সাহিত্য ও স্থাপত্য :

  • মাইকর রচনা করেন “শিবনানাবােদম” গ্রন্থটি।
  • “শিবনানাসুতিয়ার’ গ্রন্থের রচয়িতা অরুনন্দী।
  • ভেলিআলা তাম্বিরান রচনা করেন নানাবর্ণ বিলক্ষম’ গ্রন্থটি।
  • কালিদাসের ‘শকুন্তলা’ তেলেগু ভাষায় লেখেন বীরভদ্র।
  • পালিঙ্কর ভগবতগীতা মালয়ালাম ভাষায় অনুবাদ করেন।
  • বিজয়নগর স্থাপত্য শিল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল কল্যাণমণ্ডপ, সন্তপ, গর্ভগৃহ, গোপুরম এবং স্থাপত্যখচিত স্তম্ভ। এখানে দ্রাবিড় শিল্প রীতির দেখা মেলে।
  • বিজয়নগর সম্রাট তাদের নিজস্ব আর্কিটেকচার শৈলী তৈরি করেছিলেন যার নাম প্রোভিদা শৈলী যা পাইয়ার এবং স্তম্ভগুলির উপর প্রচুর জোর দেয়। তারা প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন মন্দিরে তারা রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী লিখেছিল। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ করণাটকের হুম্পির ভিথালস্বামী মন্দির এবং হাজারী মন্দির। ঘোড়া সমস্ত চিত্রায় উপস্থিত একটি পুনরাবৃত্তি প্রাণী ছিল।
  • পঙ্গলিসুরন রচনা করেন রাঘব পান্ডব বিজয়’এবং ‘প্রভাবরী পদুম্ন’নামে দুটি গ্রন্থ।
  • পান্ডুরঙ্গ মহত্তম গ্রন্থ রচনা করেন তেনালি রামলিঙ্গ।
  • আয়াল্লা রাজু রামভদ্র রচনা করেন ‘শকরামতসর সংগ্রহম’, ‘কলহস্তি সহতম’ গ্রন্থের রচয়িতা ধুরাজ্যোতি।
  • নীতিমান রচনা করেন ‘পারিজাত পােহরাণম’ গ্রন্থ।
  • মাধ্য রচনা করেন রাজশেখর চরিতম।

বিজয়নগরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • এখানকার গৃহকরকে বলাহত ‘ভাসালপ্রণাম’।
  • নাদাল বুকল, রজথাড়াঙ্কল, গন্ডরায় গাল্ডাকোল ছিল বিভিন্ন প্রকার পরিমাপের কাঠি।
  • জমিদার এবং কৃষকের মধ্যে শস্যভাগ করার ব্যবস্থাকে বলা হত বরং’।
  • মন্দির দান করাকে বলা হত ‘সমান্য।
  • আস্থাবান ছিল রাজস্ব দপ্তর।
  • নগদ করকে বলা হত ‘সিদ্ধায়া’।
  • স্বর্ণ মুদ্রার নাম ছিল প্যাগোডা।